বামেদের প্রতিবাদ মিছিলে হামলা, রণক্ষেত্র দুর্গাপুরে বোমা-ইটবৃষ্টি-2024

দুর্গাপুর: বন্‌ধ ডাকল বিজেপি, সেখানে আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমে তৃণমূল-বাহিনীর বোমাবাজির মুখে পড়ল ডিওয়াইএফআইয়ের মিছিল। বুধবার বিকেলে সিপিএমের যুব সংগঠনের মিছিল ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের ডিএমসি মোড়। ইটবৃষ্টি, বোমাবাজি, লাঠি, রডের আঘাত জখম হন বহু বামকর্মী। তাঁদের মধ্যে ৪ জন মহিলা সমেত ৭ জনের মাথা ফেটেছে। ভাঙচুর চালানো হয় সিপিএমের দলীয় কার্যালয় বিমল দাশগুপ্ত ভবনে।

এমনকী তাণ্ডব থামাতে গেলে হামলাকারীদের অকথ্য গালিগালাজের মুখে পড়েন এডিডিএ-র চেয়ারম্যান কবি দত্ত। অসহায় কবি দত্তর সামনেই চলতে থাকে ভাঙচুর, বোমাবাজি। ইটের আঘাতে জখম হন কমব্যাট ফোর্সের এক মহিলা কর্মীও।

দলের যুব ও মহিলা সংগঠনের সদস্যদের উপর হামলা, দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, বোমাবাজির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী, প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী-সহ অন্য নেতারা। 

বিপ্রেন্দু বলেন, ‘আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে আমাদের দলের যুব ও মহিলা সংগঠনের কর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করেছিলেন। সেই মিছিলে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। আমাদের দলীয় কার্যালয় ভেঙে তছনছ করা হয়েছে। বোমা ছোড়া হয়েছে। যুবকর্মীদের বাইক ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বহু কর্মী আহত। পুরো ঘটনা ঘটেছে পুলিশের সামনে। আমরা আইনের দ্বারস্থ হব।’ 

সিপিএমের যুব সংগঠনের দুর্গাপুর শাখার সম্পাদক সিদ্ধার্থ বসু বলেন, ‘আমাদের ২১ জন কর্মী আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ৪ জন মহিলা রয়েছেন। সব মিলিয়ে ৭ জন মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। কয়েকজনের আঘাত গুরুতর।’ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বলেন, ‘যারা গন্ডগোল করেছে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে। ঘটনার তদন্ত করবে পুলিশ।’ 

তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। শাসকদলের পাল্টা অভিযোগ, সিপিএমের যুব সংগঠনের কর্মীরাই মিছিল করে এসে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘বিজেপির বন্‌ধে সিপিএমের যুব সংগঠন কী কারণে মিছিল করল বুঝলাম না। ওরা মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালিগালাজ করছিল। তাতে আমাদের ছেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিরোধ করে। তখন আমাদের ছেলেদের মারধর করা হয়। পাল্টা প্রতিরোধ করে আমাদের ছেলেরা।’

এ দিন বিকেলে ডিএমসি মোড়ে পথ অবরোধের কর্মসূচি ছিল বিজেপির। তার জন্য এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল প্রচুর পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স। প্রায় একই সময়ে বিজেপির ডাকা বন্‌ধের প্রতিবাদে মিছিল করার জন্য এলাকায় জড়ো হন প্রচুর তৃণমূলকর্মী। অশান্তি এড়াতে বিজেপি তাদের কর্মসূচি বাতিল করে দেয়।

তৃণমূল তাদের প্রতিবাদ মিছিল শেষ করতেই ডিএমসি মোড়ে চলে আসে বামেদের যুব ও মহিলা সংগঠনের মিছিল। মুখোমুখি পড়ে যান দুই দলের কর্মীরা। এর পরই ডিওয়াইএফআইয়ের মিছিল লক্ষ্য করে পর পর বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলকর্মীদের বিরুদ্ধে। মারধর করা হয় বাম কর্মী-সমর্থকদের। বাদ পড়েননি মহিলারাও।

বোমাবাজি চলার মধ্যেই হামলাকারীদের একটি দল সিপিএমের দলীয় কার্যালয় বিমল দাশগুপ্ত ভবনের সামনে গিয়ে বোমা ছুড়তে শুরু করে। বোমা ফাটায় চারদিক ধোঁয়ায় ভরে যায়। ইট মেরে ভাঙা হয় জানলার কাচ। ভেঙে দেওয়া হয় কার্যালয়ের সামনে রাখা বাইক ও স্কুটার। এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পথচলতি মানুষ। পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। 

পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে যান এডিডিএ-র চেয়ারম্যান কবি দত্ত। কিন্তু, তাঁকেও রেয়াত করা হয়নি। কবি দত্তকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। কবি দত্ত বলেন, ‘আমি আর কী বলব। আমার মাথার উপর দিয়ে তিনটে বোমা ছুড়ল। দীর্ঘদিন সিটি সেন্টারে রয়েছি, এই ধরনের ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি এখানে।’

Leave a Comment